December 22, 2024, 11:06 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক//*/
কুষ্টিয়ার বেসরকারী হিকমাহ হাসপাতালে টিউমারের ভুল অপারেশন ও ভুল পোস্ট অপারেশন চিকিৎসায় এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই হাসপাতালে দালালদের একচেটিয়ে দাপটসহ চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা অনিয়ম বেড়ে চল্লেও নির্বিকার জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের হিকমাহ হাসপাতালে একটি টিউমার অপারেশনের জন্য রোগীর কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবী করে কর্তৃপক্ষ। অসহায় পরিবার মেয়ে বাঁচানোর জন্য তাতে রাজী হয়। টাকা পরিশোধও করা হয়। হিকমাহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এস.এম আক্তারুজ্জামানকে দিয়ে গত ১০ এপ্রিল অপারেশন করায়।
অভিযোগ এসেছে যে জুম্মা নামাজের পর শুরু হয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে অপারেশন সম্পন্ন না করে ডাক্তার এস এম আক্তারুজ্জামান ওটি থেকে বের হয়ে আসেন। পরে প্রতিষ্ঠানের অপ্রশিক্ষিত নার্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে সেলাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে। ১৫ এপ্রিল বেডে থাকা অবস্থায় ওই ছাত্রীর সেলাই খুলে দেয় এবং ডাবের পানি খেতে দেয়া হয়।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ঐ ডাবের পানি ছাত্রীর খাদ্য নালিতে প্রবেশ না করে পেটের ভিতরে প্রবেশ করে। তাতে রোগী অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়।
রোগীর অভিভাবকদেরকে ডাক্তার রোগীর অবস্থা খারাপ বলে তাকে কুষ্টিয়ার বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দেন। অসহায় ও গরীব মানুষগুলো ডাক্তারের কথা শুনে তাকে রবিবার গাড়ীতে করে রাজশাহীতে নিয়ে যায়। রাজশাহীর ডাক্তার রোগীকে চিকিৎসা করার পর দেখেন, অপারেশনের সময় খাদ্য নালি তিনটি কাটা হয়েছে। দুইটিতে জয়েন্ট দেওয়া হয়েছে অপরটি কোন সেলাই বা কিছু করা হয়নি।
তারা আরও জানায় রোগীর পেটের ভিতরে অপারেশনের গজের কাপড় ছিল।
রাজশাহীর ডাক্তার রোগীকে পুনরায় অপারেশনের ব্যবস্থা করলে গতকাল দুপুর ১২.৪৫ মিনিটের সময় ঐ ছাত্রী মুনিরা খাতুন মারা যায়।
কুমারখালী থানার চাপড়া ডাকঘরের অর্ন্তগত মাদুলিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে মুনিরা খাতুন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়া শহরের হিকমাহ হাসপাতাল তার অপারেশনের পর পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে থাকে। ব্যথা অসহ্য হয়ে পড়লে রোগীর পরিবার বিভিন্ন স্থানে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে কথা হলে হিকমাহ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মজিদ খান মোবাইল ফোনে বলেন, রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কাকুতি-মিনতি পরেই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশন সাকসেসফুল হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই রোগীর অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে থাকে। রোগীর লোকজন একাধিকবার আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ড্রেসিং সহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে এক পর্যায়ে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা রাজশাহী যাওয়ার পরামর্শ দেই। রবিবার তারা রোগীকে নিয়ে রাজশাহী যান। এরপরে কি হয়েছে আর জানিনা।
তিনি বলেন, টিউমার পিঠে ঠেকে গিয়েছিল। এটি একটি বড় অপারেশন ছিল, ভালোভাবে হওয়ার পরও কি কারনে তার সমস্যা হয়েছে এটা আসলে বলা সম্ভব না।
তবে বড় ধরনের অপারেশন সরকারি হাসপাতালে না করিয়ে আপনারা কেন করলেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেনারেল হাসপাতাল এ করতে না পেরে তারা আমাদের কাছে এসেছিলেন এবং এই দুর্যোগকালে অনেক কাকুতি-মিনতি করার পরেই আমরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেই। অপারেশনে কোনো ভুলভ্রান্তি হয়নি।
এ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এস.এম আক্তারুজ্জামান বলেন এ ঘটনা নতুন নয় প্রায়ই ঘটছে।
ডা. এস.এম আক্তারুজ্জামান নিজে দোষ স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সামাজিক বিচারের কথা বলছেন।
এ ব্যাপারে রাতে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের চরম গাফিলতির কারনে এসব নাম সর্বস্ব হাসপাতাল কোন রকমই যন্ত্রপাতি না থাকা সত্বেও টাকার লোভে বড় বড় অপারেশনের মতো ঝুঁিক নিয়ে রোগী হত্যা করছে।
Leave a Reply